তবে সঠিক সময়ে ধরা পড়েলে সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু অনেকেরেই দেরিতে ধরা পড়ে। যার ফলাফলও মারাত্মক। চলুন জেনে নিই এই রোগের খুঁটিনাটি তথ্য-
গ্লুকোমা কী
আমাদের চোখে এক ধরনের তরল পদার্থ বা অ্যাকুয়াস হিউমর তৈরি হয়। এই তরলের প্রধান কাজ হলো চোখের কর্ণিয়া ও ভেতরকার একাধিক কোষের পুষ্টিসাধন। এটি যে হারে উৎপন্ন সে হারেই চোখের বাইরেও নির্গত হয়। যদি কোনো কারণে এই তরলের নির্গমণ পথে বাধা সৃষ্টি হয় তবে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে চোখের ভেতর একটি বদ্ধ জায়গায় সেই তরল জমতে শুরু করে ও প্রেশার বা চাপ বাড়াতে শুরু করে। এই অবস্থাতেই গ্লুকোমা বলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চোখের অভ্যন্তরীণ স্বাভাবিক চাপ ১০ মি.মি. মার্কারি থেকে ২১ মি.মি. মার্কারি পর্যন্ত।
এই চাপ বৃদ্ধির কারণে চোখের পেছনদিকে অবস্থিত অপটিক স্নায়ুতেও চাপ পড়ে। ফলে সেটি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে। এ কারণেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায় রোগীর। তবে এমন ঘটনা কখনোই একদিনে ঘটা সম্ভব নয়।
কারা আক্রান্ত হতে পারেন
সাধারণত বয়স্কদের গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে বাচ্চাদেরও গ্লুকোমা হতে পারে। এমনকি জন্মের সময় থেকেই কোনো শিশুর গ্লুকোমা দেখা দিতে পারে। তবে বহু শিশুর জন্মগত অন্ধত্বের জন্য দায়ী জন্মগত গ্লুকোমা।
এছাড়া অনলাইনে পড়াশুনা, মোবাইল-টিভিতে তাকিয়ে থাকা, সবুজ প্রকৃতিতে না থাকা- সবমিলিয়ে শিশুদের চোখের উপর ব্যাপক ফেলছে গ্লুকোমা।
গ্লুকোমার রকমফের
রোগের উৎপত্তি ও কারণ হিসেবে গ্লুকোমা মূলত দুই ধরনের। প্রাথমিক গ্লুকোমা ও সেকেন্ডারি গ্লুকোমা।
প্রাথমিক গ্লুকোমা : এ ধরনের গ্লুকোমা চোখের মধ্যকার অংশের বিকাশগত ক্রুটির কারণে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি চোখই গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়। ৩৫ বছরের বেশি নারী-পুরুষ উভয়ের এই রোগে আক্রান্ত হন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই রোগ বংশানুক্রমিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে।
প্রাথমিক গ্লুকোমা মূলত তিন ধরনের। প্রাথমিক জন্মগত গ্লুকোমা, প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল-খোলা গ্লুকোমা ও প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল-বন্ধ গ্লুকোমা।
সেকেন্ডারি গ্লুকোমা : চোখের বা শরীরের অন্য কোনো রোগে অনেকসময় চোখের চাপ বৃদ্ধি পায়, সেই অবস্থাকেই সেকেন্ডারি গ্লুকোমা বলা হয়। এখানের গ্লুকোমা সাধারণত এক চোখে হয়ে থাকে।
গ্লুকোমার লক্ষণ
গ্লুকোমার প্রধান লক্ষণগুলো হলো-
>> দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
>> চোখ থেকে অত্যধিক মাত্রায় পানি পড়ে
>> আলোর দিকে তাকালে চোখে ব্যথা মানুষ করতে পারে শিশু।
>> চোখের পাতা আটকে যাওয়া, চোখ খুলতে অসুবিধা।
>> দীর্ঘদিন যাবত কোনো সেটরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে বা চোখে কোনও আঘাত পেয়ে থাকলে শিশু গ্লুকোমার আক্রান্ত হতে পারে।
>> আবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশায় অনেক বেশি থাকে।
>> গ্লুকোমা মারাত্মক আকার ধারণ করলে অনেক সময় কর্ণিয়া সাদা হয়ে যায়।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে চোখের প্রাথমিক সমস্যা তেনে মানুষ এড়িয়ে যায়। ফলে গ্লুকোমা ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে। তবে, গ্লুকোমার চিকিৎসা বলতে একমাত্র অপারেশন। অপারেশনের মাধ্যমে তরল নির্গমনের পথে যে বাধা তৈরি হয়েছে তা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :