রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। বিকেল হলেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা যায় ইফতারের প্রস্তুতির দৃশ্য। প্রতিদিনেই ১১ একরের এই ছোট ক্যাম্পাসে মাহে রমজানে ভিন্ন আমেজ বিরাজ করে।
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, রফিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনের দুই দালানের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের একাংশ। ঠিক এমন গোধূলি বেলায় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। আসরের পর থেকে ক্যাম্পাসে দেখা যায় এক অভিন্ন চিত্র।
সময় বাড়ার সাথে সাথেই ব্যস্ততার শুরু। যেখানে রমজানের আগে কাউকে দেখা যায় না। সেখানেই সবাই অপেক্ষা এখন আজানের! সেজন্যে কেউ কেউ ব্যস্ত ইফতারের তৈরিতে। কেউ বা ব্যস্ত প্রার্থনায়। কারো হাতে ছোলা, মুড়ি, চপ মাখানোর ব্যস্ততা, কেউ বানায় শরবত, কেউ কেউ ফল কাটে, কেউ আবার খাবার পানি, প্লেট-গ্লাস সাজায়।কেউ বা ছবি, ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ আবার আড্ডা মেতেছে বন্ধুদের সাথে। এ যেন এক মিলন মেলা, যেখানে সবার সাথে ভাতৃত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করে।
সন্ধ্যা নামার আগেই দ্রুত পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বরে সামনে দিয়ে আসছিলেন নিয়াজ শফিক । ক্লান্তি উপেক্ষা করে একগাল হেসে বললেন, “সবার জন্য ইফতার নিয়ে আসলাম”।
রমজানের এই দিনগুলোয় ১১ একরের চত্বর পরিণত হয় প্রাণের মিলনমেলায়। কেউবা বসার জায়গা পরিষ্কার করে আবার কেউ কেউ খাবার প্রস্তুত করে। পাশাপাশি খোশগল্পেও জমে উঠে ‘প্রাণের আড্ডা’। এমন আড্ডা মানেই তো বাঁধন হারা হাসি-তামাশা।
সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাদিয়া ও নাফিজ। একপাশে বসে তরমুজ কাটায় বেশ ব্যস্ত দেখা যায় তাদের। তারা জানান, “সবদিনই তো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করি। আজকে ক্যাম্পাসের সবাই মিলে ইফতার করবো। সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ইফতারের আগের সময়টুকু সবচেয়ে ভালো লাগার। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা— এসব খুবই আনন্দদায়ক”।
ক্যাম্পাসের ইফতার যেন ক্যাম্পাসের অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য উপমা। ইফতারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিজ আগ্রহে সবার সাথে কাজ করতেও দেখা যায় অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদেরকে। মুক্ত মঞ্চে সবার সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় শ্রী প্রদীপ কে। শরবতের মিষ্টতা যাচাইয়ের দায়িত্বটা তার। ছুড়ি দিয়ে শসা কাটতে কাটতেই বলেন, “সকলের সাথে ইফতার করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। সবকিছু ছাপিয়ে আমরা মানুষ। রোজার মাসে স্রষ্টার রহমত সবার উপর বর্ষিত হোক এই কামনা করি”।
কারো কারো এবার ক্যাম্পাসে শেষ ইফতার। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো। তাইতো সকলে মিলে ইফতারি করতে এসেছে প্রাণের ক্যাম্পাসে । তাদের মধ্যে রাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন ” এভাবে হয়তো সামনের বছর একসাথে ইফতারিতে বন্ধুরা এক হতে পারবো না। এমন ভাবে সবাই মিলেমিশে ইফতারি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত”।
সবার মাঝে ইফতার ও পানির বোতল পরিবেশন করতে দেখা যায় ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইসমাইল কে। প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসের ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়েছেন তিনি। ইসমাইল বলেন, “ক্যাম্পাসে সবার সাথে ভাগাভাগি করে ইফতার করার ব্যাপারটা দারুণ রকমের সুন্দর। পরিবারের শূন্যতা অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়”।
বেলা শেষে আজান হয়। সারা দিনের ক্লান্তির মধ্যে দিয়ে সবাই ইফতার গ্রহণ করেন। তারপর নামাজের জন্যে ছুটে যাওয়া। নামায শেষে বন্ধুদের আড্ডা।এই আনন্দে শেষে ক্যাম্পাস ছাড়ে সবাই।প্রাণের ক্যাম্পাস তখন ফের নীরবতায় আচ্ছন্ন হয়। ফের এই নীরবতা ভেঙে ব্যস্ততা ফিরবে। তবে সন্ধ্যার মুগ্ধতা থেকে যাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণে। যা হয়তো কখনোই ভোলা সম্ভব না।
আপনার মতামত লিখুন :