ইয়েমেনিদের ছোরা বা খঞ্জর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেদেশের গোত্রীয় সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি ইয়েমেনিদের সমর্থন এবং আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাথে তাদের সংঘর্ষ আবারও এই প্রাচীন ভূমির নাম সামনে এনেছে। কোমরবন্ধের নিচে ছুরি বেঁধে গলায় শাল জড়িয়ে রাখার রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বজুড়ে ইয়েমেনিদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। পার্সটুডে’র এই নিবন্ধে আমরা ইয়েমেনিদের ছোরা ব্যবহারের ইতিহাসের দিকে নজর দেব।
ইয়েমেনি খঞ্জর
ইয়েমেনি খঞ্জর বা ছোরা সেদেশে জানবিয়াহ নামে পরিচিত। এই ছোরাটি খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগের। হাজার হাজার বছর পেরিয়ে গেলেও, ইয়েমেনি জনসংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রয়ে গেছে আজও। ইয়েমেনে, জানবিয়াকে পৌরুষ এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এমনকি কোমরে পরিহিত ছুরি দিয়ে মানুষ চেনা যায়। ইয়েমেনিরা, তাদের ধর্ম, জাতি বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং তাদের আচার-অনুষ্ঠানে এই ছুরি ব্যবহার করে। এই ছোরাটি একটি হালকা অস্ত্র হওয়া সত্ত্বেও ইয়েমেনিরা প্রায়শই এটি গর্বের সাথে নিজেদের সঙ্গে বহন করে।
ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বস্ত
সামগ্রিকভাবে, ইয়েমেনি জনগণ পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের অন্য যে-কোনো জাতির তুলনায় তাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতি বেশি বিশ্বস্ত ও অনুগত। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই জাতীয় পোশাক পরা একটি সরকারী বা পবিত্র কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়। স্যুট পরা ইয়েমেনি পুরুষ খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা; তাদের পোশাক আরবি পোশাকের মতোই স্থানীয়। সাধারণত শাল, কোমরবন্ধ এবং ছোরা তাদের পোশাকরে অন্তর্ভুক্ত থাকে।জানবিয়া সম্পর্কে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী
ইয়েমেনি জনগণের মাঝে জানবিয়া সম্পর্কে অনেক গল্প, কল্প-কাহিনী এবং কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জানবিয়া সম্পর্কে বলা হয় যে, যদি তারা তাদের খাপ থেকে বের হয়, তাহলে যুদ্ধে জয় না পাওয়া পর্যন্ত তারা ফিরে আসবে না। অন্য কারো সম্পর্কেও বলা হয় যে এটি সাপের কামড়ে আক্রান্তের শরীর থেকে সাপের বিষ অপসারণ করতে পারে এবং সাপের বিষের প্রতিষেধক হতে পারে। অন্য কিছু জানবিয়া সম্পর্কেও বলা হয়, এটি ক্ষতের উপর রাখলে রক্তপাত রোধ করা যায়।
খঞ্জর বা জানবিয়ার গঠন
জানবিয়ার একটি হাতল রয়েছে যার নাম রাস আল-জানবিয়া। এর গঠন-আকৃতি, গুণমান এবং ধরণ পরিধানকারী ব্যক্তির মূল্য এবং মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। সবচেয়ে দামি এবং মূল্যবান জানবিয়া হলো গণ্ডারের শিং, জিরাফের শিং এবং হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি করা হয়। অবশ্য ইয়েমেনি জানবিয়ার বাজারও আজকাল আমদানি করা জানবিয়ার কারণে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। চাইনিজ জানবিয়ার দাম ৫০ ডলার থেকে ১০০ ডলারের মধ্যে।
আপনার মতামত লিখুন :