বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থা পাকিস্তানের


আজকের দেশ ২৪ প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ২:১২ অপরাহ্ণ /
বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থা পাকিস্তানের

বড় দুঃসময় পার করছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। পরপর ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সবশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—এ টুর্নামেন্টগুলো থেকে তারা বিদায় নেয় গ্রুপপর্বে। এক সপ্তাহ আগেও পাকিস্তান আনন্দে ভাসছিল, তিন দশক পর প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজক তারা। দলের ব্যর্থতায় সেই আনন্দ নিমেষে মিলিয়ে গেল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পারফরম্যান্সের দৈন্যে পাকিস্তান ‘ক্রিকেটের মৃত্যু’ হয়েছে বলে এখন শোক প্রকাশ চলছে সেখানে!পাকিস্তানের মতো কিছুটা খারাপ সময় পার করছে বাংলাদেশ দলও। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থা এখন পাকিস্তানের! গত বছর পাকিস্তানের মাঠে টেস্ট সিরিজ জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পাকিস্তানের মতো ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাবর আজমের দল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও বাংলাদেশ খেলেছিল সুপার এইটে। চলতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দু’দলই বিদায় নিয়েছে গ্রুপপর্বে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট ততটা প্রতিযোগিতামূলক নয়, আর নিম্নমানের উইকেট খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করতে পারছে না। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও হরহামেশা এ সব ইস্যু নিয়ে কথা হয়। তবে পাকিস্তানের ব্যর্থতার পেছনে বারবার বোর্ড, কোচিং স্টাফ ও নির্বাচন প্যানেলের পরিবর্তন পাকিস্তান ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনটা মূলত রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে হয়ে থাকে মনে করছেন তাঁরা। যেটি হওয়ার প্রয়োজন ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বোর্ডেও এ রকম পরিবর্তন এসেছে, তবে সেটি পাকিস্তানের মতো নয়।

শুধু তিন বছর দেখলেই ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড়! এর মধ্যে পিসিবির চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে চারবার। ২০২২ সালে রমিজ রাজা, পরের বছর নজম শেঠি, তারপরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জাকা আশরাফ, এখন দায়িত্ব পালন করছেন মহসিন নাকভি! বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, গত ১৪ বোর্ড সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে একবার। গত বছর সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে বিদায় ঘটে নাজমুল হাসান পাপনের। এরপর দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ।

গত তিন বছরে পাকিস্তানের প্রধান কোচ পরিবর্তন হয়ে আটজন। ২০২৩ সালে সাকলাইন মুশতাকের পর অন্তর্বর্তীকালীন আবদুল রেহমান, তারপর গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন, মাঝে মোহাম্মদ হাফিজ। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে হাফিজ পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হন আজহার মাহমুদ। তারপর আবার আলাদা আলাদা সংস্করণের জন্য কোচ নিয়োগ দেয় তারা। জেসন গিলেস্পিকে টেস্ট ও গ্যারি কার্স্টেনকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাও চাকরি ছাড়েন। এখন দেশটির সাবেক ক্রিকেটার আকিফ জাভেদ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁর পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে এইর মধ্যে।

বাংলাদেশেরও কোচ পরিবর্তন হয়েছে। ২০২২ সালে রাসেল ডোমিঙ্গোর বিদায়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদে আসেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবার চাকরিচ্যুত হন তিনি। এখন চলছে ফিল সিমন্সের অধ্যায়। পাকিস্তানের অধিনায়কত্বেও পরিবর্তন এসেছে চারবার। বাবর আজমের পর শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নেতৃত্বভার দেওয়া হয়েছিল। তারপর আবার ফেরানো হয় বাবরকে। বাবর ব্যর্থ হলে মোহাম্মদ রিজওয়ান সীমিত ওভার ও শান মাসুদের কাছে টেস্টের অধিনায়কত্ব পাকিস্তানের।

বাংলাদেশের অধিনায়কত্বেও ছিল পরিবর্তন। তামিম ইকবালের পর বিভিন্ন সিরিজে অন্তর্বর্তীকালীন লিটন দাস, মাঝে সাকিব আল হাসান, তারপর এখন শান্ত। তিনিও নেতৃত্ব ছাড়ার কথা বলেছেন এরই মধ্যে। গত তিন বছরে পাকিস্তানের নির্বাচক হয়েছেন ২৬ জন। বাংলাদেশে অবশ্য মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমনকে আর রাখা হয়নি নির্বাচক প্যানেলে। আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও হান্নান সরকার যুক্ত হয়েছিলেন। সম্প্রতি হান্নান পদ ছেড়ে কোচিংয়ে মনোযোগ দিয়েছেন।

কিন্তু এ তিন বছরে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে নিজেদের মাঠে টেস্টে ধবলধোলাই, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হার। আয়ারল্যান্ড সফরে ওয়ানডে হার এবং আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হেরেছেন বাবর-রিজওয়ানরা। খুবই স্পষ্ট, বেশ খারাপ সময় পার করছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দেশটির পুরো ক্রিকেট কাঠামোতে আমূল পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন সাবেকরা।