নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট বয়কট করবে: শেখ হাসিনা


আজকের দেশ ২৪ প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ১২:০৩ অপরাহ্ণ
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট বয়কট করবে: শেখ হাসিনা

জুলাই আন্দোলনের পর ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লাখো সমর্থক ভোট বয়কট করবে।বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দলকে বাদ দিয়ে যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তাহলে আমি দেশে ফিরবো না ভারতেই থাকবো।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার পর দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। নির্বাসনের পর এটাই ছিল শেখ হাসিনার প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার। তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে রয়টার্স, ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

“নির্বাচনে বৈধতা না থাকলে সরকার টিকবে না”

রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন, “পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকা জরুরি। আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু নীতিবিরুদ্ধ নয়, আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও বটে। লক্ষ লক্ষ সমর্থককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সরকার গঠিত হয়, আমি দেশে ফেরত আসবো না।”

ইউনূস সরকারের প্রতিক্রিয়া নেই

১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে রয়টার্স অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।

এর আগে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। পাশাপাশি দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে যদি নির্বাচন হয়, তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বড় ধরনের বিজয় পেতে পারে।

“আমরা কাউকে অন্য দলকে ভোট দিতে বলিনি”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের ভোটারদের অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিতে বলছি না। আমরা কেবল আশা করছি, কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।”

তিনি আরও জানান, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো গোপন আলোচনা চলছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না।

অভিযোগ, বিচার ও পাল্টা দাবি

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্নমত দমনের অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছিল। তবুও ২০২৪ সালে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন, যদিও বিরোধীদলীয় বিএনপি সেই নির্বাচন বয়কট করেছিল।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ার পর ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছে, যার রায় আগামী ১৩ নভেম্বর ঘোষণা হতে পারে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট মাসে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে, পাশাপাশি গুম ও পুলিশি নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি কোনোভাবেই সহিংসতা বা অস্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত নই। সব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো নাটক। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।”

“আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে”

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও শেখ হাসিনা আশাবাদী যে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, “এটা কেবল আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। সংবিধানের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ, কোনো একক ব্যক্তি নয়।”

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগেও বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, “দল চাইলে আমি নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বিবেচনা করবো।”

ভারতে নির্বাসন জীবন

দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা জানান, তিনি স্বাধীনভাবে থাকছেন, তবে পরিবারের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিজ্ঞতার কারণে সবসময় সতর্ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

রয়টার্স জানিয়েছে, সম্প্রতি দিল্লির ঐতিহাসিক লোধি গার্ডেন-এ তাকে দেখা গেছে। পথচারীরা চিনে ফেললে তিনি মৃদু হাসিতে তাদের অভিবাদন জানান।

দেশে ফেরার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যদি বৈধ সরকার থাকে, সংবিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষিত হয় তাহলে অবশ্যই দেশে ফিরতে চাই।”

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী কর্মীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ উঠলেও অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করছে, দেশের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।