চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ ১ হাজার ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা কমানো হয়েছে। মূল বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার ৫০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বরাদ্দ কমানোর মূল কারণ হিসেবে পূর্ববর্তী সরকারের সময় অনুমোদিত এই প্রকল্প ব্যয় পুনর্মূল্যায়নের কথা জানানো হয়।এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিগত সরকারের সময় কিছু প্রকল্পে অযৌক্তিক ব্যয় ধরা হয়েছিল। এ কারণে বর্তমান প্রশাসন ব্যয়কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করেছে, যার ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দেও পরিবর্তন এসেছে। তবে এই বরাদ্দ কমানোর কারণে প্রকল্পের চলমান অগ্রগতিতে কোনো হেরফের হবে না, বরং ব্যয় যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে
জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ২২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৩ হাজার ১৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের রাজস্ব খাতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা, আর মূল কাজের জন্য ব্যয় হয়েছে ৭৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬ লাখ টাকা।
মোট এই ব্যয়ের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৫০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৫০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে সরকারি অর্থায়নে ৪৫৪ কোটি টাকা, আর বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পের নির্মাণব্যয় আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। রাশিয়ার ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তিতে নির্মাণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট নির্মাণব্যয় ৫ হাজার ৮৯০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ টাকা। তুলনামূলকভাবে রাশিয়াতেই একই প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণব্যয় ৪ হাজার ৭৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশেও নির্মাণব্যয় গড়ে ১ হাজার ৫৫৬ থেকে ৫ হাজার ৮১ ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে অতিরিক্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় স্বচ্ছতার অভাব অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্প ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা দরকার।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। ২০২৬ সালের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংশোধিত বাজেট প্রস্তাব ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা নিয়ে পুনরায় হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :