ফেরাউন কি সত্যিই কেজিদরে তরমুজ বিক্রি করত?


আজকের দেশ ২৪ প্রকাশের সময় : মার্চ ১৬, ২০২৫, ৩:২৫ অপরাহ্ণ /
ফেরাউন কি সত্যিই কেজিদরে তরমুজ বিক্রি করত?

তরমুজ একসময় পিস হিসেবে বিক্রি হত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় তা  বিক্রি হচ্ছে কেজিদরে। এর বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এমনকি অনেকে এটিকে বলছেন, ‘ফেরাউনি ব্যবসা’। মানে কেজিদরে তরমুজ বিক্রির এই যে রীতি, এর প্রচলন ঘটিয়েছিল ফেরাউন। কিন্তু সত্যিই কি ব্যাপারটি এমন? আজ আমরা সে বিষয়ে জানব।

অনেক দিন আগের ঘটনা। মিসরের একটি গ্রামে বাস করত যুবক ফেরাউন। তার তরমুজের ব্যবসা ছিল। একদিন সে অনেকগুলো তরমুজ নিয়ে গ্রাম থেকে শহরের দিকে রওনা হলো। উদ্দেশ্য সেখানে সেগুলো বিক্রি করা। শহরে পৌঁছতে পথিমধ্যে অনেকগুলো চেকপোস্ট অতিক্রম করতে হলো তাকে।

ওই চেকপোস্টগুলোর প্রতিটিতে যেসকল দায়িত্বরত সিপাহী ছিল, তাদের প্রত্যেকেই ফেরাউন থেকে কেউ একটি, কেউ দুটি ইত্যাদি- এরকম স্ব স্ব পদ অনুযায়ী কমবেশি তরমুজ জোরপূর্বক তার থেকে রেখে দিল। ফেরাউন গ্রামের ছেলে তরমুজ নিয়ে শহরে যাচ্ছে। সে বুঝে উঠতে পারছে না যে, আসলে কী ঘটছে তার সঙ্গে। এভাবে শহর পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে তার সব তরমুজ শেষ!

এ পরিস্থিতিতে ফেরাউন চিন্তিত হয়ে পড়ল, আরেহ! এটি কেমন এলাকা। জোর যার মুল্লুক তার। যে যেভাবে পারছে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করছে। তাই সেও চিন্তা করল যে, তাইলে আমারও এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। মানে আমারও ভাবতে হবে তাদের মতো আমিও কীভাবে মানুষ থেকে তাদের সম্পদ এভাবে নিয়ে নিতে পারি।

যেমন চিন্তা তেমন কাজ। ফেরাউন এমন একটি স্থান নির্বাচন করল, যেখানে প্রত্যেকে যেতেই হবে। সে নির্বাচন করল কবরস্থান। এরপর যারাই সেখানে স্বজনদের কবর দিতে আসে, তাদের থেকে নির্দিষ্ট একটা অংক ফেরাউন জোরপূর্বক আদায় করে। নইলে লাশ কবর দিতে দেয় না। এভাবে করতে করতে ফেরাউন অনেক টাকার মালিক হয়ে গেল।

এভাবে ধনী ফেরাউনের অনেক সাঙ্গপাঙ্গ তৈরি হলো। তারাও বিভিন্ন কবরস্থানে তার মতোই টাকা উঠাতে শুরু করল। ঘটনাক্রমে মিসরের তৎকালীন বাদশাহর এক মন্ত্রী মারা যায়। বাদশাহ নিজে দাফনকার্য সম্পাদন করতে কবরস্থানে আসে। কিন্তু ভেতর থেকে মন্ত্রীর লাশ ফেরত নিয়ে আসে সিপাহীরা। বাদশাহ এর কারণ জানতে চায়। সিপাহীরা জানায়, ভেতরে টাকা না দিলে কবর দিতে দিচ্ছে না।

বাদশা রেগে অগ্নিশর্মা। রাগতস্বরে বললেন, আমার রাজ্যে এভাবে অনৈতিক কাজ চলে। আমার মন্ত্রীকেও টাকার জন্য দাফন করতে দেওয়া হচ্ছে না। কে করছে এটা? তাকে ধরে নিয়ে আসো। সিপাহীরা ফেরাউনকে ধরে নিয়ে আসল। ফেরাউনের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করা হলো। সে বাদশাহকে তরমুজের কাহিনীটি বিস্তারিত বলল।

বাদশাহ ফেরাউনের এই উত্তর শুনে চিন্তা করল—যে এই ঘটনায় (তরমুজ) উদ্বুদ্ধ হয়ে এভাবে গোরস্তানে টাকা ওঠানো শুরু করেছে এবং ধনী হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই তার বুদ্ধি আছে। সে বুদ্ধিমান। সুতরাং তাকে কবরস্থানে না রেখে আমার সাথে নিয়ে যাই, সময়মতো সে আমাকে পরামর্শ দেবে।

রাজদরবারে এখন অনেক কাজ ফেরাউনের পরামর্শ মতো চলে। বাদশায়ও তার পরামর্শ শোনে। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন বাদশাহ মারা গেল। তখন রাজ্যে আলোচনা উঠল, বাদশাহ হবে কে? সভাসদরা সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে, তাদের মধ্যে যে বেশি বুদ্ধিমান সেই হবে পরবর্তী বাদশাহ। আর বেশি বুদ্ধিমান ফেরাউন। কারণ সে বাদশাহকে পরামর্শ দিত। এভাবে সর্বসম্মতিক্রমে ফেরাউন বাদশাহ নির্বাচিত হলো।

এটাই হলো ফেরাউনের সঙ্গে তরমুজের সম্পর্ক। কেজিদরে তরমুজ বিক্রির যে ঘটনা তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়।

লেখক: মুহাদ্দিস, দারুল উলুম ঢাকা